Remarriage extinguishes the right to the property of the deceased husband or wife?

পুনরায় বিবাহ করলে মৃত স্বামী বা স্ত্রীর সম্পত্তিতে অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায়?

উত্তরাধিকার আইন

ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থায় শফিকের সাথে জয়ার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং প্রেমের সূর্যাস্ত বিয়েতে রূপ নেয়। প্রথমে জয়ার পরিবার থেকে কিছু আপত্তি থাকলেও পরবর্তীতে জয়ার চাপাচাপিতে তার পরিবার রাজি হয়। জয়ার পরিবারের আপত্তির মূল কারণ ছিল তারা শফিকদের পরিবারের চাইতে আর্থিক এবং বংশীয় মর্যাদায় বেশ উঁচু ছিল। বেশিরভাগ প্রেমের মধ্যে যেটি বাঁধা হয়ে কাজ করে আরকি।

মেয়ের সুখের দিকে তাকিয়ে জয়ার পরিবার একসময় সম্মতি দেয় এবং পারিবারিক ভাবেই উভয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর খুব সুন্দর ভাবে তাদের দাম্পত্য জীবন চলতে থাকে। উভয় চাকরিজীবী হওয়ার কারণে সারাদিন দুজনই অফিসে ব্যস্ত থাকে এবং অফিস ছুটির পর তারা তাদের মতো করে ঘুরে বেড়ায়, বিয়ের আগে যেভাবে তারা প্রেম করে সময় কাটিয়েছিল বিয়ের পরেও একই ভাবেই তারা বিবাহিত জীবনটাকে প্রেম জীবনের মত উপভোগ করছিল।

 

সন্তান নিয়ে তাদের দুইজনের মধ্যেই একটু অবহেলা ছিল। উভয়ই তাদের জীবনটি আরও বেশি উপভোগ করার জন্য একে অন্যের সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য, সন্তান নিতে কিছুটা বিলম্ব করছিল। তাছাড়া বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করার ক্ষেত্রে যখন তখন চাইলেও ছুটি পাওয়া যায় না। এর উপর জীবনযাত্রার যে অবস্থা তাতে স্বামী স্ত্রী উভয়ই চাকরি না করলে বা আয় রোজগার না করলে এখনকার দিনের সংসার চালানো কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। তাই জয়া চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি সংসারী হবে এটি সে চায় না। এদিকে সন্তান নিতে গেলে তাকে ছুটির বিকল্প নেই। এসব চিন্তা করতে করতে তারা বিয়ের প্রায় ছয় সাত বছর পার করে দেয়।

 

শুরু হয় পারিবারিক চাপ। পুরুষ মানুষ সন্তান জন্ম দিতে যেকোনো সময় সক্ষম হলেও নারী একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর সন্তান জন্মদানে জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। তাই ডাক্তারি পরামর্শে জয়া সন্তান ধারণের চেষ্টা করে এবং এটি মনস্থির করে নেয় যে যদি সন্তানকে মানুষ করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয় সেক্ষেত্রে সে এটুকু ত্যাগ করবে; শফিক ও তাতে সায় দেয়।

সবকিছুই পরিকল্পনা-মাফিক হচ্ছিল কিন্তু বিলম্বে সন্তান জন্ম ধারণ এবং নানাবিধ জটিলতার কারণে জন্ম দেওয়ার সময় জয়া বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং যার ফলশ্রুতিতে জয়াকে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মৃত্যুবরণ করতে হয়। সৌভাগ্যবশত, জয়ার সন্তানটি বেঁচে যায়; মা মারা গিয়ে বাচ্চা জীবিত থাকাটা আদৌতে কতটা সৌভাগ্যের কে জানি?
কিন্তু, বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মের প্রায় ছয় সাত মাসের মাথায় ঐ সন্তানটিও মৃত্যুবরণ করে। উল্লেখ্য সন্তানটি একটি কন্যা সন্তান।

 

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা না করলেও আবেগ এবং স্মৃতি বড্ড অলসের মত ফেবিকলের ন্যায় মানুষের মস্তিষ্কে বসে থাকে। শফিক সাহেব প্রথমে এতো দিনের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে দিশেহারা, অবলম্বন এবং জয়ার স্মৃতি হিসেবে সন্তানকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার যে চেষ্টা ছিল, অবশেষে সেটিও শেষ হয়ে গেলো।

মানুষ সামাজিক জীব আর সমাজ কাউকে একা ছেড়ে দিতে চায় না। তাই, শফিক সাহেবের পরিবার থেকে তাকে নতুন করে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সে কিছুতেই বিয়ে করবে না বলে মন স্থির করেছিল, শফিকের বাবা-মা জোর করে ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে একাকীত্ব দূর করার জন্য তাকে পুনরায় বিয়ে দিয়ে দেন। সমস্যার শুরু এখান থেকেই।

শফিক এবং জয়া যখন একসাথে চাকরি করতো তখন শফিক ভালোবেসে তাদের দুজনের ইনকামের টাকা দিয়ে একসাথে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছিল এবং সেটি জয়ার নামে রেজিস্ট্রি করেছিল। জয়া অনেকবার বলেছিল উভয়ের নামে যৌথ নামে ক্রয় করার জন্য কিন্তু শফিক শুধুমাত্র সেটি জয়ার নামেই রেজিস্ট্রেশন করেছিল; যদিও টাকা উভয়ে দিয়েছিল।

 

এখন জয়ার পরিবার শফিককে ঐ ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপাচাপি শুরু করেছে। যতদিন পর্যন্ত শফিক বিয়ে করেনি ততদিন পর্যন্ত তারা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। যখনই সে বিয়ে করল তখনই তাকে ওই ফ্লাটটি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য তারা নোটিশ পাঠান। অথচ যদি ধরে নেই যে ফ্ল্যাট কেনার পুরো টাকা জয়া কিংবা জয়ার পরিবার দিয়েছিল, সেক্ষেত্রেও ঐ ফ্ল্যাট জয়ার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকার হিসেবে তার স্বামী চার ভাগের এক এবং তার মেয়ে অর্ধেক এবং বাকি অংশটুকু তার বাবা-মা মালিক হওয়ার কথা।

যেহেতু মেয়ে মারা গেছে মায়ের পরে, সেক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে মেয়ে ইতিমধ্যে অর্ধেক সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে ফেলেছে। যার ফলে শফিক এবং জয়ার মেয়ে মারা যাওয়ার পরে তাদের মেয়ে তার মায়ের কাছ থেকে অর্ধেক সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে যাবে। আবার, সন্তান মারা যাওয়ার পরে উত্তরাধিকার সূত্রে শফিক সাহেব বাবা হিসেবে শেয়ারার এবং আসাবা হিসেবে মালিকানা অর্জন করবেন।

 

শফিক সাহেব পুনরায় বিয়ে করার কারণে তিনি তার স্ত্রী এবং কন্যা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন এমনটা মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের কোথাও বলা নেই। এমনকি জয়ার যদি অন্য কোথাও কোন স্থাবর অস্থাবর সম্পদ থেকে থাকে বা অফিস থেকে যদি কোন টাকা পয়সা পেয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও শফিক সাহেবের অধিকার রয়েছে।
যদিও এখন সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী পুনরায় বিবাহ করলে ওই পেনশনের অর্থ নিয়ে কিছু জটিলতা(অন্যত্র বিবাহ করলে দেওয়া হয় না) রয়েছে। কিন্তু সম্পত্তির যে উত্তরাধিকার মুসলিম আইন অনুসারে রয়েছে সেখানে স্বামী কিংবা স্ত্রী মারা যাওয়ার সময় তার জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে যদি বিবাহ বন্ধন অটুট থাকে, সেক্ষেত্রে তারা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুসারে অবশ্যই উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি পাবে।

 

একজনের মৃত্যুর পর অন্যজন আইন অনুযায়ী যদি অন্যত্র বিয়ে করে সেক্ষেত্রে পূর্বের বৈবাহিক সম্পর্কের বদৌলতে উত্তরাধিকার আইন অনুসারে যে সম্পত্তি পাওয়ার কথা সেখান থেকে কোন মতে বঞ্চিত হবে না। একই কথা, বৈবাহিক সম্পর্ক বলবত থাকাবস্থায় স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী ইদ্দতকালিন সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আইন অনুযায়ী বিবাহ করলে তাকেও তার পূর্বের স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এক শ্রেণীর সম্পদ লোভী, যারা পরের হক মেরে খাওয়ার মতলবে থাকে, তারা মিথ্যা আইনের প্রচার করে সুবিধা ভোগ করতে চায়। সঠিক আইন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন, নিজে আইন মানুন, অন্যকে আইন মানতে উৎসাহিত করুন।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.