Property distribution process for childless couples

নিঃসন্তান দম্পতির সম্পত্তি বন্টন প্রক্রিয়া

উত্তরাধিকার আইন

আমাদের সমাজে প্রায় কিছু দম্পতি দেখা যায় যাদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের মধ্যে কোন সন্তান জন্ম নেয় না। যার ফলে তাদেরকে সাধারণত নিঃসন্তান দম্পতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অতীতে দেখা যেত যে, কোন দম্পতির যদি সন্তান জন্মগ্রহণ না করতো তাহলে সেটিকে স্ত্রীর সমস্যা ধরে নিয়ে স্বামীকে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হতো আবার অনেক ক্ষেত্রে উভয় স্ত্রীকে একই সাথে রেখে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা হতো। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে সন্তান দানে পুরুষ ব্যর্থ নাকি নারী সেটি খুব দ্রুত নির্ধারণ করা যায় এবং ওই সমস্যারও সমাধান করা যায়।

কিন্তু এরপরও কিছু দম্পতি থেকে যায় যারা কৃত্রিম কোন উপায় অবলম্বন না করে পুরো জীবন নিঃসন্তান কাটিয়ে দেয়। এখন নিঃসন্তান দম্পতি যদি মৃত্যুবরণ করে সেক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তি নিয়ে চারদিকে টানাপোড়েন লেগে যায়। আমরা সকলেই জানি যে সন্তান না থাকলে সম্পত্তি বাইরে চলে যাবে। তাছাড়া শুধুমাত্র কন্যা সন্তান থাকলেও সম্পত্তি বাইরে চলে যায়। একমাত্র পুত্রসন্তান পারে পুরো সম্পত্তি নিজের কাছে ধরে রাখতে। এখন কোন নিঃসন্তান দম্পতি যখন কোন ছেলে কিংবা মেয়ে নেই, সেক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন হবে?

 

আমরা প্রথমেই জেনে নিই, নিঃসন্তান দম্পতির নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন বিষয়ে. অর্থাৎ, নিঃসন্তান দম্পতির স্বামী মারা গেলে স্ত্রী কতটুকু সম্পত্তি পাবে এবং স্ত্রী মারা গেলে স্বামী কতটুকু সম্পত্তি পাবে?

আমরা জানি যে, সন্তান যদি না থাকে সেক্ষেত্রে স্ত্রী মারা গেলে স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামী উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবে অর্ধেক। আর যদি সন্তান থেকে থাকে সেক্ষেত্রে স্ত্রী মারা গেলে স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে স্বামী সম্পত্তি পায় চার ভাগের এক ভাগ।

অন্যদিকে সন্তান না থাকলে মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রী সম্পত্তি পায় চার ভাগের এক ভাগ। আর সন্তান থাকলে মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রী সম্পত্তি পাবে আট ভাগের এক ভাগ।

 

এখন, আমাদের হিসেবটা সহজ হয়ে যাবে যদি আমরা এভাবে দেখি যে, নিঃসন্তান দম্পতির মধ্যে স্ত্রী যদি মারা যায় সে স্বামী পাবে অর্ধেক, আর স্বামী মারা গেলে স্ত্রী পাবে চার ভাগের একভাগ। অর্থাৎ, নিঃসন্তান দম্পতির স্ত্রী মারা গেলে স্বামী যে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে এই অর্ধেকের বাহিরে বাকি যে অর্ধেক সম্পত্তি রয়েছে সেটি পাবে স্ত্রীর বাবা, মা, ভাই, বোন যারা রয়েছেন, তারা। একই ভাবে নিঃসন্তান দম্পতির স্বামী মারা গেলে স্ত্রী পাবে চারভাগের একভাগ সম্পত্তি। বাকী চারভাগের তিনভাগ সম্পত্তি পাবে স্বামীর বাবা, মা, ভাই, বোন যারা রয়েছেন তারা।

আশা করি এতটুকু আমরা বুঝতে পেরেছি যে, নিঃসন্তান দম্পতির সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে বাবা মা ভাই ভাই বোনের কতটুকু অগ্রাধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনভাবেই স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর যে চার ভাগের এক অংশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে সেটি থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। একই ভাবে স্ত্রীর মৃত্যুতে স্বামীকে স্ত্রীর সম্পত্তিতে অর্ধেক পরিমাণ যে উত্তরাধিকার রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে বা বিরোধ দেখা দিতে পারে, যদি কোন দম্পতি নিঃসন্তান হয়ে থাকে, কিন্তু তাদের আগের কোন সংসারে সন্তান থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তি বণ্টনটা কিভাবে হবে?

 

ধরুন কোন এক দম্পতি সুমন এবং সুমির ১০ বছরের দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করার পরও তাদের কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। যার ফলে সুমনের পরিবার থেকে সুমনকে অন্যত্র আরেকটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বাধ্য করা হল। এমতাবস্থায় সুমন এবং সুমির সংসারে কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণ না করলেও সুমন পরবর্তীতে যে রেখাকে বিয়ে করেছে ওই সংসারে তাদের একটি সন্তান রয়েছে। সেটা ছেলে হোক কিংবা মেয়ে তাতে কোন সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তি বণ্টন কি রকম হবে?
এখানে বলে রাখা ভালো যে, নিঃসন্তান বলতে বোঝায় দু’জনের কারও সন্তান থাকছে না। যখনই সুমন অন্যত্র বিয়ে করে এবং সন্তান জন্মদান করছে তখন থেকেই সুমন আর নিঃসন্তান থাকছে না। যখন সুমনের সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে কথা উঠবে, সেক্ষেত্রে সুমনের যেহেতু সন্তান রয়েছে, সেক্ষেত্রে তার স্ত্রীরা সম্পত্তি পাবে আট ভাগের এক ভাগ এবং এক্ষেত্রে তার যেহেতু দু’জন স্ত্রী তাই তারা দু’জন মিলে আট ভাগের এক ভাগের অংশটিকে সমান ভাবে বণ্টন করে নিবে তাদের নিজেদের মধ্যে।

অর্থাৎ, সুমি এবং রেখা তারা দুইজন মিলে ষোল ভাগের এক ভাগ করে সম্পত্তি পাবে সুমনের কাছ থেকে। এখানে সুমির কোনভাবেই বলার অধিকার নেই যে আমার তো সন্তান নেই, সেক্ষেত্রে আমি চারভাগের একভাগ পাবো। মূলত সুমনের সম্পত্তি বণ্টন করা হচ্ছে। তার সন্তান রয়েছে কিনা সেটি হচ্ছে প্রশ্ন। যেহেতু সুমনের রেখার সাথে সংসার সন্তান রয়েছে, সেক্ষেত্রে সুমনের সম্পত্তি বণ্টন ক্ষেত্রে সুমনের সন্তান রয়েছে। এই হিসেবে তার স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগ অংশ পাবে। যেহেতু স্ত্রী এখন ২ জন, তাই ১/৮ অংশ তাদের নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিবে।

তবে সুমন যখন মৃত্যুবরণ করবে তখন যদি তার কোন স্ত্রী মৃত থাকে, আরেকজন জীবিত থাকে সেক্ষেত্রে একজন পুরো আট ভাগের এক ভাগ অংশ পাবে। কিন্তু একের অধিক স্ত্রী যদি জীবিত থাকে এবং তাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বলবৎ থাকে, সেক্ষেত্রে পুরো আট ভাগের একভাগ তাদের সকলের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন হবে।

 

একই ভাবে যদি সুমন এবং সুমির মধ্যে বিবাহ হওয়ার পূর্বে সুমির অন্যত্র রাকিবের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা অবস্থায় সন্তান থেকে থাকে, কিন্তু সুমনের সাথে দাম্পত্য করার সময় সন্তান না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সুমির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে সুমির সন্তান রয়েছে, সে হিসেবে সুমন চারভাগের একভাগ সম্পত্তি পাবেন। যেহেতু মুসলিম আইন অনুসারে একজন স্ত্রী একই সময়ে একাধিক স্বামী রাখতে পারে না, সেক্ষেত্রে আমরা ধরে নিলাম রাকিব মৃত কিংবা তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। সেক্ষেত্রে স্বামী একাই ১/৪ অংশ পাবেন। শুধু এটা মাথায় রাখতে হবে, যার সম্পত্তি বণ্টন করা হচ্ছে তার কোন সন্তান রয়েছে কিনা। যেহেতু সুমির সন্তান রয়েছে পূর্বের স্বামীর সাথে, সেক্ষেত্রে সুমনের সাথে সুমির সন্তান না থাকা সত্ত্বেও অর্ধেক এর পরিবর্তে চার ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি পাবে। আশা করি নিঃসন্তান দম্পতির সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়া নিয়ে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.