আইনত আপনার যদি কোন সম্পত্তিতে স্বত্ব(মালিকানা) থাকে বা আপনি কোন আইন ভিত্তিক মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে, তাহলে ঐ সম্পত্তি আপনি কারো কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়াই ব্যবহার করতে পারেন, একইভাবে আপনি আইন ভিত্তিক যে মর্যাদার অধিকারী, সেই অধিকারটিও আপনি কারো কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই ব্যবহার বা উপভোগ করতে পারেন। বিপত্তি হবে, যখন কেউ আপনার ওই সম্পত্তিতে স্বত্ব বা আপনার আইন ভিত্তিক মর্যাদার অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে বা আপত্তি জানাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উক্ত বিপত্তি বা বিরোধের বিপরীতে আপনার আইনগত প্রতিকার কি?
কোন ব্যক্তি যদি আপনার মালিকানাধীন সম্পত্তিতে আপনার স্বত্ব বা আপনার আইন ভিত্তিক মর্যাদার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে বা আপত্তি জানায়, সেক্ষেত্রে আপনি যে ওই সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী বা আইনগত মর্যাদার অধিকারী, এই মর্মে আদালতের নিকট ঘোষণা চেয়ে মামলা দায়ের করতে পারবেন, একেই ঘোষণামূলক মোকদ্দমা বলে। ঘোষণামূলক মোকদ্দমায় প্রদত্ত ডিক্রিকে ঘোষণামূলক ডিক্রি বলা হয়ে থাকে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭২ এর ৪২ ধারায়, ঘোষণামূলক মোকদ্দমা সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। ৪২ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন আইনগত পরিচয় বা সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন, যিনি সেরূপ আইনগত পরিচয় বা সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বা অস্বীকারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কোন আইনগত পরিচয় বা পদ বা সম্পত্তির অধিকারের ঘোষণা প্রার্থনা করে এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানী আদালতে যে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়, তাকে বলা হয় ঘোষণামূলক মোকদ্দমা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যায়?
চলুন আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো, কোন কোন ক্ষেত্রে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যায় বা ঘোষণা চাওয়া যায়…
- প্রথমত, বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। যেমন, বাদি বিবাদির সাথে বিবাহিত হন নাই, এই মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। আবার, মোকদ্দমার পক্ষসমূহের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে, এই মর্মেও ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। এছাড়াও বিবাহ সংক্রান্ত অন্য কোন ঘোষণার প্রয়োজন হলে সেটির জন্যও ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।
- দ্বিতীয়ত, দত্তক বৈধ বা অবৈধ সে বিষয়েও ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে। যেমন, বাদি বিবাদির দত্তক গ্রহণকারী পিতা বা বিবাদি বাদির দত্তকপুত্র, এই মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে। আবার, উক্ত সম্পর্ক অস্বীকার করার ক্ষেত্রেও ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন, যেমন বাদি বিবাদির দত্তকপুত্র নয়, এই মর্মেও ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।
- তৃতীয়ত, ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- চতুর্থত, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়েও ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- পঞ্চমত, সরকারি চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা না গেলেও বেসরকারি চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- ষষ্ঠত, দলিল বাতিল এবং উক্ত দলিল বাদির উপর কার্যকর নয়, এই মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- সপ্তমত, বিবাদি যদি ভুয়া বা প্রতারণামূলক দলিল দিয়ে মালিকানা দাবি করে, তাহলে বাদি তথা প্রকৃত মালিক নিজেকে ওই জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।
- অষ্টমত, কেউ যদি কোন যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী হয়ে থাকে কিন্তু তার স্বত্ব অন্যরা অস্বীকার করে থাকে, সেক্ষেত্রে তিনি তার নিজের স্বত্বের ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।
- নবমত, কর সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার যে আইনগত অধিকার রয়েছে, সেই বিষয়ে চাইলে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- দশমত, কোন মামলায় আপনার প্রতিপক্ষ যদি আপনার বিরুদ্ধে প্রতারণামূলকভাবে ডিক্রি প্রাপ্ত হয়, সেক্ষেত্রে তা আপনার উপর কার্যকর নয়, এই মর্মে আপনি ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
- এগারতম, অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- বারোতম, ট্রাস্ট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- তেরোতম, ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- চৌদ্দতম, আপনি যদি কোন জমিতে ১২ বছর যাবত ভোগ দখল করে, সেক্ষেত্রে তার যে স্বত্ব তৈরি হয়, সেই স্বত্ব বা অধিকার যদি কেউ অস্বীকার করে, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- পনেরতম, জমির দখল সংক্রান্ত সমস্যা হলে, দখলদার দখলে থাকার জন্য ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।
- ষোলতম, সরকারি কোন দাবী বাদির উপর কার্যক্রম নয়, এই মর্মে আপনার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
- সতেরতম, আপনার যদি কোন কোম্পানিতে শেয়ার থাকে, সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আপনার উক্ত কোম্পানিতে যে অধিকার রয়েছে, সেই অধিকার যদি কেউ অস্বীকার করে, তবে সেই অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন বিষয়ে আপনি যদি আপনার অধিকার বা স্বত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন বা অস্বীকারের মুখোমুখি হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনি কোন আইনের কোন ধারা অনুযায়ী সেই অধিকার বা স্বত্বের অধিকার, সেটি উল্লেখপূর্বক ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যেতে পারে।
ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করলেই যে, আদালত আপনার পক্ষে ঘোষণামূলক ডিক্রি প্রদান করবেন, তা কিন্তু নয়। এই বিষয়ে আদালতের ক্ষমতা হচ্ছে বিবেচনামূলক। আদালত যথাযথ বিবেচনা করে ঘোষণামূলক মোকদ্দমার প্রতিকার মঞ্জুর করতেও পারেন আবার নামঞ্জুরও করতে পারেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ।
চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন।
( এই আর্টিকেলটি নিয়ে আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে, যোগাযোগ করুনঃ 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )