ত্রিভুজ এবং ষড়ভুজ আকৃতির জমি মাপবেন যেভাবে

ত্রিভুজ এবং ষড়ভুজ আকৃতির জমি মাপবেন যেভাবে

জমি-জমার আইন

সাধারণত আমাদের দেশে বেশির ভাগ জমি চতুর্ভুজ প্রকৃতির হয়ে থাকে, যেসব জমিতে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম চার দিকে চারটি বাহু থাকে। আপনি আপনার গ্রাম, মফস্বল কিংবা শহরের জমিজমা গুলোর দিকে যদি একবার নজর দিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, প্রায় সব জমিই হচ্ছে চতুর্ভুজ আকৃতির। গত পর্বে আমরা দেখেছিলাম যে, চতুর্ভুজ আকৃতির জমি কিভাবে মাপতে হয়। আজকের পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করবো কিভাবে চতুর্ভুজ ব্যতীত অন্যান্য জমিগুলো নিজে নিজে মাপা যায়।

আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যে, কিছু জমি থাকে ইংরেজি L আকৃতির। অর্থাৎ, জমিগুলো দেখতে অনেকটা নীচের চিত্রের মত,

এই ধরনের জমিগুলোতে ৬ টি বাহু থাকে, যেগুলোকে জ্যামিতির ভাষায় ষড়ভুজ বলা হয়ে থাকে। এই ষড়ভুজ প্রকৃতির জমির পরিমাণ কিন্তু একদমই কম না। শহরে যেমন দেখা যায়, গ্রামেও অহরহ ষড়ভুজ প্রকৃতির জমি দেখা যায়। খুব অল্প পরিসরে ত্রিভুজ প্রকৃতির জমিও দেখতে পাওয়া যায়। আজকের পর্বে আমরা ত্রিভুজ এবং ষড়ভুজ প্রকৃতির জমি নিজে নিজে মাপার উপায় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

প্রথমেই আমরা যাবো ষড়ভুজ প্রকৃতির জমি কিভাবে নিজে নিজে মাপা যায় সে বিষয়ে। আপনি যদি ইতিমধ্যে আমাদের নিজের জমি নিজে মাপার উপায় সংক্রান্ত আর্টিকেলটি না পড়ে থাকেন, তাহলে প্রথমে সেই আর্টিকেলটি পড়ে আসুন, তারপর এই আর্টিকেল পড়ুন।

 

ষড়ভুজ প্রকৃতির জমিতে ৬ টি বাহু থাকে। ৬ টি বাহু থাকলেও খেয়াল করলে দেখবেন, দিক কিন্তু ৪ টি; চতুর্ভুজের মত। ছোট বেলায় আমাদেরকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার সময় ‘বুদ্ধিমত্তা’ নামক একটি সাবজেক্টে পড়াশোনা করতে হতো। সেই বুদ্ধিমত্তা থেকে আমরা শিখেছিলাম যে, একটি ষড়ভুজকে চাইলে ২ টি চতুর্ভুজে পরিণত করা যায়। আপনি উপরের ষড়ভুজটিকে চাইলেই মাঝখানে দাগ টেনে ২ টি চতুর্ভুজে পরিণত করতে পারবেন। এখন যদি একটি ষড়ভুজকে আপনি দুইটি চতুর্ভুজে পরিণত করতে পারেন, তাহলে দুইটি চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল যোগ করলেই সহজেই ষড়ভুজের ক্ষেত্রফল বের হয়ে আসবে।

আরও সহজ ভাষায় বলা যায় যে, ষড়ভুজ প্রকৃতির জমি হচ্ছে ইংরেজি L এর মতো দেখতে, L এর যে অংশটি কেটে দিলে জমিটি দেখতে চতুর্ভুজের মত দেখাবে, সেই অংশটি কেটে আলাদা করে নিতে হবে। তখন আপনাআপনি ২ টি চতুর্ভুজ তৈরি হয়ে যাবে। তখন, উভয় চতুর্ভুজের প্রতিটি চতুর্ভুজের চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য বের করার পর আপনাকে উত্তর বাহু ও দক্ষিণ বাহু যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ দিতে হবে। আবার পূর্ব বাহু এবং পশ্চিম বাহু যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ দিতে হবে। উত্তর বাহু এবং দক্ষিণ বাহু যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ দিয়ে যেটা বের হবে ধরে নিন সেটি দৈর্ঘ্যের গড় এবং পূর্ব বাহু ও পশ্চিম বাহু যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ দিয়ে যা বের হলো সেটি প্রস্থের গড়। এখন প্রতিটি চতুর্ভুজের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ গুন করলেই ক্ষেত্রফল বের হয়ে যাবে। এভাবে উভয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল বের করার পর যোগ করলে আপনি পেয়ে যাবেন ষড়ভুজের ক্ষেত্রফল।

 

ধরুন উপরের চিত্রে যে ষড়ভুজটি আমরা দেখছি, সেটিকে প্রথম চতুর্ভুজের উত্তর বাহু= ২০ ফুট, দক্ষিণ বাহু= ২০, পূর্ব বাহু= ২০ ফুট, পশ্চিম বাহু= ২০ ফুট। তাহলে প্রথম চতুর্ভুজ একটি বর্গে পরিণত হয়েছে। আমরা বর্গের সূত্র অনুসারেও ক্ষেত্রফল বের করতে পারি কিন্তু এখানে আমরা চতুর্ভুজের সূত্র অনুসারে বের করবো, কেননা জমিতে বর্গ আপনি সবসময় পাবেন না। তাই, প্রথম চতুর্ভুজের দৈর্ঘ্যের গড়= (উত্তর বাহু+ দক্ষিণ বাহু)/২= (২০+২০)/২= ৪০/২=২০ ফুট এবং প্রথম চতুর্ভুজের প্রস্থের গড়= (পূর্ব বাহু+ পশ্চিম বাহু)/২= (২০+২০)/২= ৪০/২=২০ ফুট। অতএব, প্রথম চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল= দৈর্ঘ্যXপ্রস্থ= ২০X২০= ৪০০ বর্গফুট।

একই ভাবে দ্বিতীয় চতুর্ভুজের উত্তর বাহু= ২০ ফুট, দক্ষিণ বাহু= ২০, পূর্ব বাহু= ৩০ ফুট, পশ্চিম বাহু= ৩০ ফুট। দ্বিতীয় চতুর্ভুজের প্রস্থের গড়= (উত্তর বাহু+ দক্ষিণ বাহু)/২= (২০+২০)/২= ৪০/২=২০ ফুট এবং দ্বিতীয় চতুর্ভুজের দৈর্ঘ্যের গড়= (পূর্ব বাহু+ পশ্চিম বাহু)/২= (৩০+৩০)/২= ৬০/২=৩০ ফুট। (উল্লেখ্য, চতুর্ভুজের যে বাহু বড় সেটি দৈর্ঘ্য আর যেটি ছোট সেটি হচ্ছে প্রস্থ, কনফিউজড হওয়ার কিচ্ছু নাই)। সুতরাং, দ্বিতীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল= দৈর্ঘ্যXপ্রস্থ= ৩০X২০= ৬০০ বর্গফুট।

উপরের হিসেব থেকে আমরা পেলাম যে, প্রথম চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল= ৪০০ বর্গফুট এবং দ্বিতীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল= ৬০০ বর্গফুট। তাহলে আমাদের ষড়ভুজের ক্ষেত্রফল= ৪০০+৬০০=১০০০ বর্গফুট।

 

এবার আসুন, ত্রিভুজ আকৃতির জমির কাছে। গ্রামে খুব একটা দেখা না গেলেও শহরে চিপাচিপায় মাঝে মধ্যে ত্রিভুজ আকৃতির কিছু জমি বা বাড়ি দেখা যায়। অনেকেই তিন কোণা জমি নিয়ে বেশ কটূক্তি করে এর মূল্য একেবারে কমিয়ে দেয়। ক্রেতা ক্রয় করতে চায় না, বিক্রেতা বিক্রয় করতে পারে না, বাটোয়ারাতে কেউ নিতে চায় না, মেলা ঝামেলা। আবার, অনেকেই ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে অনেক সুন্দর করে ডিজাইন করে বিল্ডিং করে সুন্দর বাণিজ্যিক এবং আবাসিক বাসা ভাড়া দিতেও দেখা যায়। তাই, নিজের কাছে কোন বিষয়ে বুদ্ধি বা উপায় না থাকলে কি হয়েছে, যে বা যারা ঐ বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে নিয়োগ করে ঠিকই সমাধান বের করা সম্ভব। ত্রিভুজ আকৃতির জমি নিয়ে তাই টেনশনের কিছু নেই।

 

যাই হোক, ত্রিভুজ আকৃতির জমি মাপা একদম সহজ নিচের এই সূত্র অবলম্বন করে। আপনি নার্ভাস না হয়ে, শুধু ত্রিভুজ আকৃতির জমিটির ৩ টি বাহুর দৈর্ঘ্য কত সেটি বের করবেন, তারপর নিচের সূত্র অনুসারে সহজেই জমির পরিমাপ বের করতে পারবেন। সূত্রটি দেখুনঃ  

ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = √{s(s – a)(s – b)(s – c)} বর্গ একক; যেখানে s = (a + b + c)/2

ত্রিভুজ আকৃতির জমি

উপরের সূত্র অনুসারে, ধরে নেই, a=৫০ ফুট, b=৬০ ফুট, c=৭০ ফুট।

এখন, সূত্রের S= (a+b+c)/2= (৫০+৬০+৭০)/২= ১৮০/২=৯০ ফুট। অর্থাৎ, S= ৯০ ফুট। 

সূত্রের S, a, b, c যখন বের হয়ে গেছে, তখন আসুন আমরা সূত্র অনুসারে ত্রিভুজ আকৃতির জমির ক্ষেত্রফল বের করি,

A = √{s(s – a)(s – b)(s – c)}= √{৯০(৯০-৫০)(৯০-৬০)(৯০-৭০)}

=√(৯০X৪০X৩০X২০) = √২১৬০০০০ =১৪৬৯.৬৯

ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার আরও অনেক সূত্র থাকলেও প্রায় সব ধরনের ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এই এক সূত্রেই বের করা সম্ভব, তাই এটির ব্যবহার দেখানোর চেষ্টা করলাম। আশা করি, এখন থেকে নিজের জমি নিজে মেপে পরিমাপ বের করতে আর কোন অসুবিধা হবে না, ইনশাআল্লাহ্‌।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.