Right of Easement

সুখাধিকার আদায় করবেন কিভাবে?

তামাদি আইন

আজ থেকে কয়েক দশক আগে আমরা তাকালে দেখতে পাবো যে, আমার আপনার সকলেরই পরিবার ছিল একান্ন ভিত্তিক পরিবার, যাকে আমরা যৌথ পরিবার বলে জানি। দাদা দাদি, বাবা মা, চাচা চাচি সহ এক ঝাঁক চাচাতো ভাই বোনের সমারোহ নিয়েই ছিল আমাদের একেকটি যৌথ পরিবার। কিন্তু, কালের বিবর্তনে আর পশ্চিমাদের অনুসরণে আমরা এখন যৌথ পরিবার থেকে নিউক্লিয়ার বা একক পরিবারে রূপান্তরিত হতে শুরু করি। আজকের দিনে আমাদের সবারই পছন্দে পরিণত হয়েছে একক পরিবার। স্বামী স্ত্রী আর দুই একটি সন্তান। এখন দুই সন্তানও কারো কারো কাছে কষ্টদায়ক মনে হয়। আবার, একটি জেনারেশন তো আরও এক ধাপ এগিয়ে। তারা ২/৩ রুমের ফ্ল্যাটেও অস্বস্তি বোধ করে। তাদের বদৌলতে এক রুমের স্টুডিও এপার্টমেন্টই এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেকেই আবার এখন বিয়ে করতেও এখন অনীহা প্রকাশ করছে; ‘মৃত্যুর পরে সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক নাকি কারো দায়িত্ব নেওয়া’ এই যুক্তিতে। মানুষ সুখে থাকার জন্য ক্রমাগত নিজেদের পূর্বের গৎবাঁধা নিয়ম ভঙ্গ করছে। কেউ এটাকে বিপদজনক বলছেন তো, কেউবা আবার বলছে প্রত্যেক যুগেরই একটা আলাদা মতাদর্শ রয়েছে। যে পশ্চিমারা নিউক্লিয়ার পরিবারকে উন্নতি করন বা প্রমোট করেছে, সেই পশ্চিমারাই এখন বলছে, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে দিয়ে তারা ভুল করেছে। কারণ, এখন পরিবারের ছোট বাচ্চাদের লালনপালনের জন্য বেবি-সিটার নিয়োগ দিতে হচ্ছে, যেটা কিনা পূর্বে পরিবারের মুরুব্বীরা (দাদা দাদি) অনায়াসেই করতে পারতেন। পূর্বের তুলনায় এখন কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়েছে, যার ফলে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রেও এখন নারীদের অনীহা তৈরি হচ্ছে, কারণ বাচ্চা লালন পালনের ভার কাকে দিবে, এই এক বিরাট টেনশন। যার ফলে সন্তান জন্মদানের হারও ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে। এখন আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.১০, অর্থাৎ একজন স্বামী, একজন স্ত্রী মিলে গড়ে ২ জনের চেয়ে একটু বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছে। একটি কাঁপল তো আর ২ জনের চেয়ে একটু বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে না, বেশির ভাগ কাঁপল ২ টি করে সন্তান জন্ম দিচ্ছে, তার মধ্যে কিছু কিছু কাঁপল আছে যারা কিনা ৩ টি বা ৪ টি সন্তান জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থাতেই অনেক সন্তান মৃত্যুবরণ করে বলে এখন আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্থির বা কারো কারো মতে নিম্নগামী।

এখনো কেউ কেউ যৌথ পরিবার পছন্দ করে, কেউ বা একক পরিবার, কেউ গ্রামে থাকতে পছন্দ করে, কেউ বা শহরে, কেউ বিয়ে করে সংসারী হতে পছন্দ করে, কেউ বা একা জীবনকেই স্বাধীন জীবন বলে বিশ্বাস করে; একেক জন মানুষের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেক রকম। তাই, কার সুখ কেমন, কার সুখ কিসে, সেটা আসলে আগে থেকেই বলে বা নির্ধারণ করে দেওয়া সম্ভব না। যে যেভাবে আছে বা যে যেভাবে ছিল, তাকে সেভাবে থাকতে দেওয়ার মাধ্যমেই সুখী করা সম্ভব। কাউকে সুখী করতে হলে বাড়তি কিছু করার দরকার নেই, কেবল সে যেভাবে ছিল বা আছে, তাকে সেভাবে থাকতে দিলেই হল। আইনের সুখাধিকারটাও অনেকটা এই রকম যে, দীর্ঘকাল ধরে কেউ যদি কোন সুখ শান্তি উপভোগ করে আসে, তাহলে তাকে সেই সুখ শান্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তবে, এই সুখ শান্তি কিন্তু সবকিছু থেকে নয়; কেবল বসবাসের জন্য যে আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলো থেকে, যেমন আলো, বাতাস, পানি, রাস্তা বা পথ ইত্যাদি।

 

একটি বিল্ডিং-এ আলো, বাতাস প্রবেশ করা সুখাধিকারের একটি উদাহরণ। তেমনি ভাবে একটি পথ দিয়ে চলাচল করাটাও সুখাধিকারের মধ্যে পড়ে। পানির ব্যবহার সেটি পুকুর, দীঘি বা নদী যেখানেই হোক না কেন, সেটিও সুখাধিকারের মধ্যে পড়ে। তেমনি ভাবে পানির জলস্রোতকেও সুখাধিকারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একজন মানুষ এধরনের যেকোনো সুযোগ সুবিধা যেগুলোই দৈনন্দিন জীবনযাপনের তাগিদে ব্যবহার করে আসছিল, সেগুলো সে আজীবন এভাবেই উপভোগ করে যাবে, এটাই তার সুখাধিকার। এটাকে কেউ বাঁধা দিলে সে তার সুখাধিকার আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

এখন কথা হচ্ছে, কিভাবে এই অধিকার তৈরি হয়?
আপনার নিজের জমিতে তো আপনার এসব অধিকার এমনিতেই রয়েছে। আপনার নিজের জমিতে তো আপনাকে কেউ এসে বাঁধা দিবে না সূর্যের আলো, বাতাস বা অন্য কোন সুখাধিকার উপভোগ করতে। আপনাকে বাঁধা দিবে যখন আপনি এই সুখাধিকার অন্যের জমিতে অধিকার হিসেবে আদায় করতে যাবেন।

তামাদি আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী, আপনি যদি কারো সম্পত্তিতে ২০ বছর যাবত শান্তিপূর্ণ ভাবে এবং প্রকাশ্যে কোন একটি বা একাধিক সুখাধিকার ভোগ করে থাকেন, তাহলে ঐ জমিতে আপনার উক্ত সুখাধিকারটি নিরঙ্কুশ ও অলঙ্ঘনীয় অধিকারে পরিণত হবে।
আবার, আপনি যদি সরকারী সম্পত্তিতে ৬০ বছর যাবত শান্তিপূর্ণ ভাবে এবং প্রকাশ্যে কোন একটি বা একাধিক সুখাধিকার ভোগ করে থাকেন, তাহলে উক্ত জমিতে আপনার ঐ সুখাধিকারটি নিরঙ্কুশ ও অলঙ্ঘনীয় অধিকারে পরিণত হবে।
অর্থাৎ, সরকারী সম্পত্তিতে ৬০ বছর আর বেসরকারি সম্পত্তিতে ২০ বছর। উক্ত সময়ের মধ্যে যদি আপনাকে ঐ সম্পত্তির মালিক বা সরকার বাঁধা দেয়, তাহলে আপনি এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। আপনি যদি নির-বিচ্ছিন্নভাবে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং অধিকার বলে বেসরকারি সম্পত্তিতে ২০ বা সরকারী সম্পত্তিতে ৬০ বছর ভোগ করেন, তাহলে আপনার সুখাধিকার তৈরি হয়ে যাবে। উক্ত ২০ বা ৬০ বছর পরিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তী ২ বছরের মধ্যে আপনি সুখাধিকারের মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনি যদি বিবাদী হয়ে থাকেন, অর্থাৎ আপনার সম্পত্তিকে কেউ এসে অবৈধভাবে সুখাধিকার আদায় করতে চাচ্ছে, তাহলে আপনি প্রমাণ করবেন যে, আপনি বাঁধা প্রদান করেছেন বা বাদী অনুমতি নিয়েই সুখাধিকার ভোগ করছে, যা কিনা ব্যাহত করে বাদীর নিরবচ্ছিন্ন বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বা অধিকার বলে সুখাধিকারকে; বাকিটা আদালত বিবেচনা করে নির্ধারণ করবেন। আশা করি, সুখাধিকার সম্বন্ধে একটি মৌলিক ধারনা পেয়েছে। ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.