যে ৪ উপায়ে তালাক প্রদান করা যেতে পারে

পারিবারিক আইন

মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক বা ডিভোর্স (Divorce) চার উপায়ে হতে পারে।

প্রথমত, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce),

দ্বিতীয়ত, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce),

তৃতীয়ত, উভয়ের সম্মতিতে অর্থাৎ উভয় দ্বারা বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক বা ডিভোর্স (Divorce) এবং

চতুর্থত, আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক বা ডিভোর্স (Divorce).

স্বামীর দ্বারা স্ত্রীকে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce)

স্বামী চাইলে যে কোন সময় যেকোনো কারনে তার স্ত্রীকে স্বামীর দ্বারা স্ত্রীকে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce) প্রদান করতে পারেন। যদিও অনেকেই মনে করেন, স্বামী তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কারণ দেখানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোন কারণ ছাড়া তো আর তালাক হয় না, সেক্ষেত্রে তালাক নোটিশে  স্বামী যে কোন একটি কারণ দেখিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকেন। আপনি যদি বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১০ টি তালাক নোটিশ দেখেন তার মধ্যে ৮ টিতেই মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন, পরস্পরের বনিবনা না হওয়ার কারণে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce) দেওয়া হচ্ছে। কারণ যেটাই হোক স্বামী চাইলেই স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন।

স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce)

স্ত্রীও চাইলে তার স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারে। কিন্তু তার জন্য বিবাহের সময় যে কাবিননামা প্রস্তুত করা হয় তার ১৮ নাম্বার কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে সে অধিকারটা দিতে হয় যার ফলে স্ত্রী তার স্বামীকে চাইলেই তালাক নোটিশ এর মাধ্যমে তালাক প্রদান করতে পারে। এই ক্ষেত্রেও স্ত্রী তালাকের কারণ দেখিয়ে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce) নোটিশ পাঠাতে পারে।

উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক বা ডিভোর্স (Divorce)

অনেক দম্পতি আছে তারা যখন বুঝতে পারে যে, তাদের দাম্পত্য সম্পর্কটা আর কন্টিনিউ করা সম্ভব না বা তাদের মধ্যে একটি অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বিদ্যমান, সেক্ষেত্রে তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে নোটিশ বা মামলা মোকদ্দমায় না জড়িয়ে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক বা ডিভোর্স (Divorce) প্রদান করে থাকে। এটিকে খুলা তালাক বলা হয়ে থাকে।

কোন তালাকই সুন্দর নয়, কেননা তালাকের মাধ্যমে একটি সম্পর্কের ইতি ঘটে। তাই কখনোই তালাককে আমরা সুন্দর বলতে পারি না। কিন্তু তালাকের যতগুলো উপায় রয়েছে তার মধ্যে এই উপায়টি হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর। কারণ একটি সম্পর্ক যখন থাকবেই না, যখন তালাক অবশ্যম্ভাবী, তখন যথাসম্ভব সুন্দরভাবে এর থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক কিংবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেওয়া হলে সেটা কেন জানি শুধু তালাকেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যাবতীয় নির্যাতনের মামলা, যৌতুকের মামলা, দেনমোহরের মামলা, ভরণপোষণের মামলা, অভিভাবকত্বের মামলায় জর্জরিত হয়ে দুইজন ব্যক্তি দুইজনের প্রতি এবং দুইটি পরিবারের প্রতি যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল সেটি আর অবশিষ্ট থাকে না। এমনকি তাদের যদি সন্তান থেকে থাকে সেক্ষেত্রেও সন্তানের ভবিষ্যৎটা অনিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু উভয়ের সম্মতিতে খুলা তালাক বা ডিভোর্স (Divorce) হলে, সেক্ষেত্রে তারা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিরোধীয় বিষয় গুলো নিষ্পত্তির মাধ্যমে সুন্দরের মধ্যে আলাদা হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মামলা হওয়ার সুযোগ খুবই কম থাকে এবং যদি তাদের সন্তান থেকে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের সন্তান কার কাছে থাকবে এবং বাবার কাছে যদি থাকে তাহলে মা কতদিন দেখতে পারবে, মায়ের কাছে থাকলে বাবা কতদিন দেখতে পারবে, সন্তানের ভরণপোষণ, পড়াশোনা সবকিছুই সুন্দর ভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে।

আর্টিকেলের এই অংশে এসে আমি একটি ব্যক্তিগত অনুরোধ করবো, যাদের সন্তান রয়েছে এবং আপনারা আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্কটি আর বলবৎ রাখতে চাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে যতই তিক্ততা থাকুক, দয়া করে চেষ্টা করবেন আপনাদের তিক্ততা যাতে আপনাদের সন্তানের উপর না পড়ে। চেষ্টা করবেন উভয়ের সম্মতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক দিতে এবং সন্তান কার কাছে থাকবে সেটি নিয়ে যতটুকু সম্ভব নিজের পক্ষ থেকে ছাড় দিয়ে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে। দেনমোহর বা ভরণপোষণের টাকার পরিমাণ নিয়ে দরকষাকষি করতে করতে দয়া করে সন্তানের জীবনটাকেই তছনছ করে দিবেন না। আমরা জানি যে, বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে ছেলে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকে আর মেয়ে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত, পরবর্তীতে বাবার কাছে চলে যেতে হয়। কিন্তু আপনারা যদি খুলা তালাক বা সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক সম্পন্ন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনারা চাইলে দুই পক্ষ নিজেদের মতো করে সন্তানের ভবিষ্যৎ তাকে গুরুত্ব দিয়ে সন্তানের অভিভাবকত্ব পালন করতে পারেন।

মনে রাখবেন, একজন স্বামী খারাপ হতে পারে, একজন স্ত্রীও খারাপ হতে পারে। কিন্তু একজন বাবা কিংবা একজন মা কখনো তার সন্তানের জন্য খারাপ হতে পারে না। তাই আপনার দৃষ্টিতে আপনার স্ত্রী যদি খারাপ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও আপনার সন্তান তার মায়ের কাছে যে খারাপ থাকবে বিষয়টা কিন্তু তা নয়। একইভাবে, আপনার স্বামী হয়ত আপনার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ স্বামী, কিন্তু সন্তানের বাবা হিসেবে তিনি হয়ত শ্রেষ্ঠ বাবা, তিনি কখনোই তার সন্তানের খারাপ চাইবেন না। তাই স্বামী বা স্ত্রীর উপর রাগ করে সন্তানকে তার বাবা বা মা যেকোনো একজনের কাছ থেকে বঞ্চিত করবেন না। বাবা এবং মা উভয়ের আদরে, উভয়ের শাসনে, উভয়ের স্মৃতি লালন করে সন্তানকে পরিপূর্ণভাবে মানুষ হয়ে ওঠতে বাবা মা হিসেবে আপনারা কখনোই বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন না, প্লীজ।

আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক বা ডিভোর্স (Divorce)

আদালতের মাধ্যমে তালাক হয়ে থাকে সাধারণত যদি কাবিননামার ১৮ নাম্বার কলামে স্বামী তার স্ত্রীকে সরাসরি তালাক দেওয়ার অধিকার না দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে তালাক দিতে পারে বা অন্য যেকোনোভাবেই বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ বা পারিবারিক আদালত আইন ১৯৮৫ অধীনে মামলা দায়ের করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যেতে পারে।

আজকে এই পর্যন্তই; তালাক নোটিশ কিভাবে পাঠাতে বা তালাক কিভাবে কার্যকর হয়, এই সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ তালাক নিয়ে যত জানা-অজানা – Article – Legal Fist

আবার, তালাক নোটিশ পাঠানোর পর আপনাদের মধ্যে সমঝোতা করে পুনরায় সংসার করতে চাইলে কি করতে হবে, তা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ তালাক নোটিশ পাঠানোর পর আপোষ/সমঝোতা – Article – Legal Fist

তাছাড়া, তালাক কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর সন্তানের দিকে তাকিয়ে বা অন্য যেকোনো কারনে সাবেক স্বামী বা স্ত্রীর সাথে সংসার করতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ তালাকের পর একই স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে – Article – Legal Fist

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.