ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর হচ্ছে, রাষ্ট্রের সকল জনসাধারণের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ। একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রের ভিতরে বাহিরে অনেক ধরনের ব্যয় বা খরচ রাষ্ট্রকে বহন করতে হয়। আর রাষ্ট্র যেহেতু সেই ধরনের ব্যয়গুলো বহন করে থাকে, তাই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রকে সেই ব্যয় পরিশোধে অংশগ্রহণ করতে হয়। সাধারণত রাষ্ট্রের জনগণের স্বার্থে যাকে আমরা বলে থাকি জনসাধারণের স্বার্থে বা জনস্বার্থে এই ব্যয়ের অর্থ সংগ্রহই করা হয়ে থাকে জনগণের আয়করের টাকায়। এক কথায়, রাষ্ট্রের জনগণকে আয়কর হিসেবে অর্থ প্রদান করতে হয় রাষ্ট্রকে, যার ভিত্তিতে রাষ্ট্র তার জনগণের প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে থাকে।
রাষ্ট্রের জনগণ রাষ্ট্রের খরচ বহন করার জন্য রাষ্ট্রকে যে অর্থ প্রদান করা করে তাকে আমরা আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স বলে থাকি। কিন্তু কথা হচ্ছে, রাষ্ট্রের সকল জনগণ কি রাষ্ট্রের খরচ বহন করতে হবে? উত্তর হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড রয়েছে। আমরা যদিও জানি যে আইন সবার জন্য সমান কিন্তু আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স এর ক্ষেত্রে আইনটি বিভিন্ন রেশিও অনুসারে তার মানদণ্ড বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নির্ধারণ করে থাকে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের আয়ের মানুষদেরকে ইনকাম ট্যাক্স বা কর প্রদান করতে হয় না। ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি কেউ উপার্জন করলে তারপর তাকে আয়কর প্রদান করতে হয়। এরপর যাদেরকে ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করতে হয় তাদেরকে বিভিন্ন রেশিও তে বিভিন্ন অনুপাতে আয়কর প্রদান করতে হয়; সেগুলো নিয়েই আমরা আলোচনা করব। তবে সবাইকে ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করতে হয় না, কিন্তু সবাই বিভিন্ন ভাবে ইনডিরেক্টলি সরকারকে আয়কর প্রদান করে থাকেন। চলুন নিম্নে আমরা জেনে আসি, সরাসরি আয়ের উপর যাদেরকে আয়কর প্রদান করতে হবে এবং কত টাকার নিচে আয় করলে আয়কর প্রদান করতে হবে না।
করযোগ্য আয়ের ভিত্তিতে যাদের কর প্রদান করতে হবে আর যাদের করতে হবে না:
একদম সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, আপনি যদি বছরে ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা আয় করে থাকেন,সে ক্ষেত্রে আপনাকে আয়কর প্রদান করতে হবে। আপনার আয় যদি বার্ষিক ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকার কম হয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে কর প্রদান করতে হবে না। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এই সাধারণ হিসেবটি সবার জন্য। অর্থাৎ, আয় যদি ৩ লক্ষ টাকার বেশি হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে আয়কর প্রদান করতে হবে তবে কয়েক শ্রেণীর জন্য আয় কর আইনে কিছু ছাড় রয়েছে। যেমন, নারী অর্থাৎ মহিলা, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং যাদের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি তাদের ক্ষেত্রে বাৎসরিক আয় তিন লক্ষ টাকার পরিবর্তে ৩,৫০,০০০/- (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। তাদের আয় যদি তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে আয়কর প্রদান করতে হবে।
সবচেয়ে বেশি ছাড় প্রদান করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা রয়েছেন তাদের বাৎসরিক ইনকাম ৪,৭৫,০০০/- (চার লক্ষ পঁচাত্তর হাজার) টাকা এর বেশি হলে তখন গিয়ে উনাকে আয়কর প্রদান করতে হবে। এর কম হলে আয়কর প্রদান করতে হবে না।
আবার, প্রতিবন্ধীদের আয় যদি ৪,৫০,০০০/- (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার কম হয় সেক্ষেত্রে তাদেরকে আয়কর প্রদান করতে হবে না। ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে কেবলমাত্র তখনই আয়কর প্রদান করতে হবে।
নিম্নে বুঝার সুবিধার্থে আমরা চক আকারে বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দেখাচ্ছি যাতে বুঝতে সুবিধা হয়:
সাধারনত | ৩,০০,০০০/- |
স্ত্রীলোক, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, ৬৫ বা তার বেশি বয়সের মানুষ | ৩,৫০,০০০/- |
মুক্তিযোদ্ধা | ৪,৭৫,০০০/- |
প্রতিবন্ধী | ৪,৫০,০০০/- |
এখন কথা হচ্ছে কারো ইনকাম যদি ট্যাক্সিবল না হয় অর্থাৎ আয়কর যোগ্য না হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে তাকে কি আয়কর জমা দিতে হবে কিনা?
উত্তর হচ্ছে, না। তবে, আয়কর রিটার্ন জমা বা দাখিল করতে হবে। আপনার যদি আয়কর যোগ্য আয় হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনাকে যেমন আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে, একই ভাবে আপনার উপার্জন যদি আয়কর যোগ্য নাও হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রেও আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।
এক কথায় বলা চলে, একজন আয়কর দাতা যেহেতু TIN সার্টিফিকেটের মাধ্যমে আয়কর প্রদান করে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে যেই ব্যক্তির TIN সার্টিফিকেট হয়েছে, তাকে আয়কর রিটার্ন জমা বা দাখিল করতেই হবে; এটা বাধ্যতামূলক। তার ওপর আয়কর প্রযোজ্য হলে আয়কর জমা দিবেন আর যদি আয়কর প্রযোজ্য না হয়ে থাকে অর্থাৎ তার উপার্জন যদি আয়কর বা আয় দেওয়ার মত পর্যায়ে না থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে তার আয়কর দিতে হবে না, তবে রিটার্ন সাবমিট করতেই হবে।
আয়কর/ ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্র গুলো
কোন ধরনের আয় গুলোকে আমরা আয়করের জন্য ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করবো, সেই সম্বন্ধে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ তে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো হল”
- এক, বেতনাদি।
- দুই, নিরাপত্তা জামানতের উৎস সুদ।
- তিন, গৃহ সম্পত্তির আয়।
- চার, কৃষি আয়।
- পাঁচ, ব্যবসা বা পেশার আয়।
- ছয়, মূলধনী মুনাফা।
- সাত, ফার্মের আয়ের অংশ।
- আট, স্বামী বা স্ত্রী বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের আয়।
- নয়, অন্যান্য উৎস হতে আয়, তবে রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় নিম্নলিখিত আয়ের খাতসমূহ সম্পৃক্ত হবে আয়।
আজকে এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে আমরা আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স নিয়ে আরও বিশদ আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ্। ধন্যবাদ।
চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন।
( এই আর্টিকেলটি নিয়ে আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে, যোগাযোগ করুনঃ 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )