Granting Solatium

সান্তনামূলক ক্ষতিপূরণ প্রদান বা Granting Solatium

বিবিধ আইন

ক্রিকেট খেলায় একটি নিয়ম হচ্ছে যে, একজন খেলোয়াড় আহত হলে তার পরিবর্তে ফিল্ডিং করার জন্য মূল একাদশের বাহিরে যে ৪/৫ জন খেলোয়াড় থাকেন, তাদের একজনকে দিয়ে ফিল্ডিং করানো যায়। তবে, শুধু ফিল্ডিং করতে পারবে, না বোলিং না ব্যাটিং। যদিও বর্তমানে মাথায় আঘাত লাগলে সম্পূর্ণ নতুন একজন খেলোয়াড়কে মাঠে নামানো যায় এবং বোলিং, ব্যাটিং সবই করানো যায়; এটাকে concussion law বলা হয়। কিন্তু মাথায় আঘাত ব্যতীত অন্য কোন আঘাতের কারণে এগারো জনের বাহিরে অন্য কোন খেলোয়াড়কে মাঠে নামানো যায় না। তাই, আপনার দলের উইকেট কিপার যদি কোন কারণে আহত হয়, সেক্ষেত্রে আপনার দলের বাকি যে ১০ জন খেলোয়াড় রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে একজনকে উইকেট কিপিং করতে হবে, দ্বাদশ কোন খেলোয়াড়কে আনতে পারবেন না।
concussion law হওয়ার আগে একবার ইংল্যান্ড এ দল ভারতে খেলতে এসেছিল এবং তখন ইংল্যান্ড এ দলের অধিনায়ক ছিলেন এলিস্টার কুক। কোন কারণে ইংল্যান্ডের উইকেট কিপার যে ছিল, সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ক্রমাগত বমি করছিল, যার ফলে তার উইকেট কিপিং করা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্ভাগ্যবশত, ইংল্যান্ডের ওই দলের মধ্যে আর কোন খেলোয়াড় ছিল না যে কিনা উইকেট কিপিং করতে পারে। এমতাবস্থায় এলিস্টার কুক আম্পায়ারের কাছে আবেদন করেন যে, দ্বাদশ কোন খেলোয়াড়কে উইকেট কিপিং করার অনুমতি প্রদানের জন্য, কিন্তু আম্পায়ার সেখানে আপত্তি জানান এবং আইনে কি বলা আছে, সেটা আম্পায়ার এলিস্টার কুককে দেখান। তখন, এলিস্টার কুক বলেছিলেন যে, সবসময় আইন দেখাতে নেই, পরিস্থিতির বিবেচনায় কখনো কখনো মনুষ্যত্বও দেখাতে হয়।
আজকের আর্টিকেলের সাথে উপরের ঘটনাটি অনেক প্রাসঙ্গিক, তাই পটভূমি তৈরি করতে এবং পাঠক সহজেই বুঝতে উক্ত ক্রিকেটীয় উদাহরণ টানলাম।

 

আজকের আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনার মনে হবে, আদালত শুধু আইন (পড়ুন হাইকোর্ট) দেখায় না, মনুষ্যত্বও দেখায়।
আইনে সবসময়, দুই যোগ দুই সমান চার হয় না, কখনো কখনো দুই যোগ দুই সমান তিন হতে পারে আবার কখনো কখনো দুই যোগ দুই সমান পাঁচও হতে পারে।
তো চলুন আজকে একটি ভিন্ন ধরনের আইনি প্রতিকার সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করি।
ব্যবসায়ী সেলিম সাহেব হঠাৎ আর্থিক সমস্যায় পড়ে নিজের বসতবাড়ি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি ঠিক করেন বাড়ি বিক্রি করে ব্যবসার হাল পুনরায় ধরবেন এবং স্ত্রী সন্তান নিয়ে প্রয়োজনে কিছুদিন বাসা ভাড়া থাকবেন। ব্যবসা আবার ঠিক মতো আগের অবস্থায় আসলে পুনরায় বাড়ি কেনা যাবে। এমতাবস্থায়, বাড়ি বিক্রি করার পর টাকা পয়সা লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার পর সেলিম সাহেব এক্সিডেন্টে মারা গেলেন।
হঠাৎ, বিধবা হয়ে ছোট ছোট সন্তানদেরকে নিয়ে সেলিম সাহেবের স্ত্রী সুরমা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়লেন। তিনি ব্যবসার কিছু বুঝেন না, আপাদমস্তক গৃহিণী মানুষ। তাই, তিনি কোন মতেই স্বামীর বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নন। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় বাড়ি বিক্রি করতে চাইলেও তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু, স্বামী সেলিম সাহেব সে আপত্তি শুনেননি। তাছাড়া সুরমা বেগম তখন ভেবেছিলেন স্বামী যেহেতু জীবিত আছেন, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সুরমা বেগমের জায়গায় থাকলে বাঙালি প্রায় সব নারীই এটাই ভাবত যে, বাড়ি বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে ব্যবসা করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারলে সেই ক্ষেত্রে হয়তো এই বাড়ি পুনরায় আবার ক্রয় করা সম্ভব হবে বা অন্যত্র কোন একটি বাড়ি ক্রয় করা সম্ভব হবে। কিন্তু এখন যেহেতু স্বামী মারা গিয়েছে এবং সুরমা বেগম একজন গৃহিণী সেক্ষেত্রে তিনটি বাচ্চা নিয়ে তিনি এখন কোথায় যাবেন?
তাই তিনি ঠিক করেছেন, স্বামীর বিটাবাড়ি তিনি বিক্রি করবেন না। অন্যদিকে ক্রেতা হালিম সাহেব বারংবার বাড়ির দখল বুঝে নিতে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় সুরমা বেগম যখন ওই বাড়ি বিক্রি করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিক্রয় মূল্য ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব জানান। তখন বিধবা মহিলার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে হালিম সাহেব আদালতের দ্বারস্থ হলেন।
স্বাভাবিকভাবে আপনি যদি কোন বিক্রয় যুক্তি করে থাকেন এবং টাকা লেনদেন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ওই চুক্তি বাস্তবায়ন করাটা আবশ্যক। কিন্তু, কখনো কখনো এর ব্যতিক্রম ঘটে থাকে। কেননা, চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের বিষয়ে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতের ক্ষমতা হচ্ছে বিবেচনাধীন। আদালত যেটা ঠিক মনে করবেন, সেটাই সিদ্ধান্ত দিবেন।

সাধারণত কোন পরিস্থিতিতে আদালত চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের ডিক্রি প্রদান করবেন না, সেই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭২ এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে।
আমাদের উপরের ঘটনাটিতে সুরমা বেগম বিধবা স্ত্রী আদালতে হাজির হয়ে বলেন যে, তিনি এই তিনটি বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে যদি ওই বাড়িটি বিক্রি করতে হয়।
এখন কথা হচ্ছে, আইন তো মানুষের মঙ্গলের জন্যই। এমন নয় যে আইনে যা বলা হয়েছে তা কার্যকর করার জন্য যদি মানুষের ক্ষতিও হয় তারপরও আইন আইনের গতিতে চলবে; বিষয়টা কিন্তু এমন নয়।
চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের বিষয়ে ডিক্রি প্রদান করার বিষয়ে আদালতের যেহেতু বিবেচনাধীন ক্ষমতা রয়েছে, তাই আদালত এক্ষেত্রে নিজের বিবেচনাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন না করে বরং হালিম সাহেবকে তার বিক্রয় মূল্য ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি কিছু সান্তনামূলক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন।
হালিম সাহেব উক্ত টাকা দিয়ে চাইলে অন্যত্র একটি বাড়ি ক্রয় করতে পারবেন। কিন্তু বিধবা সুরমা বেগমের পক্ষে সম্ভব নয় ওই বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার পর তিনটি এতিম বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো। এ পুরো বিষয়টিকে বলা হয়, সান্তনামূলক ক্ষতিপূরণ প্রদান বা Granting Solatium.

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.